আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্যে হোমিওপ্যাথির ভূমিকা।
আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে অনেকগুলি সমস্যা দেখা দেয়, যথা-সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা সম্পর্কীয়, স্বাস্থ্য ও ঔষধ সম্পর্কীয় ইত্যাদি। চিকিৎসক হিসাবে, আমরা স্বাস্থ্য ও ঔষধ সম্পর্কীয় সমস্ত জটিল সমস্যাগুলি বিষয়ে সচেতন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমাদের অন্যান্য বিষয়ে কিছু করণীয় নেই। বরং চিকিৎসকেরা সমাজে এমনই একটা উচ্চস্থানে অবস্থান করেন যে, জাতীয় স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সমস্ত বিষয়গুলি একত্রিতভাবে গ্রহণ করতে হয়।
একজন লোকের শারীরিক ও মানসিক সুন্দর ভারসাম্যের অবস্থা হচ্ছে স্বাস্থ্য। জনগণের সুন্দর স্বাস্থ্যের উপরই দেশের মেরুদন্ড নির্ভর করে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা সব থেকে নির্ভর করে সুন্দর স্বাস্থ্যের উপর আবার একটা জাতির উন্নতি নির্ভর করে জনগণের শক্তির উপর।
জাতীয় স্বাস্থ্য অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভর করে, যেমন জলসরবরাহ ও নিস্কাশন, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, জন্মের হার হ্রাস, মশা নিয়ন্ত্রণ, ঔষধজ শিক্ষা ও গবেষণা এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও আরোগ্য ইত্যাদি। অকাল মৃত্যুর হার কমাবার জন্য রোগের প্রতিষেধকের প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রতি বৎসর, আরোগ্যসম্ভাবনাহীন বলে ঘোষিত যে সমস্ত রোগে লক্ষ লক্ষ মূল্যবান জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই সমস্ত মূল্যবান জীবন রক্ষার্থে কৃতকার্যতার সঙ্গে চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী।
হোমিওপ্যাথি প্রতিষেধক ও রোগ:
হোমিওপ্যাথি প্রতিষেধক ও রোগ আরোগ্য সম্পর্কীত বিষয়ে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। প্রতিটি মানুষই কিছু বংশগত রোগ প্রবণতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যেটা কিছু রোগের অত্যধিক প্রবণতার জন্য দায়ী। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, গ্রহণ ক্ষমতা, রোগ জীবাণু, এবং অনুভুতি প্রবণতা প্রভৃতি দ্বারা প্রতিটি মানুষ জন্মের পর পুনরায় প্রভাবিত হয়। এই প্রবণতা আবার বয়স, স্ত্রী পুরুষ ভেদ, পেশা, জীবনযাত্রার ধরণ ও আরও অন্যান্য বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এই প্রবণতার উপর রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ভর করে। রোগের প্রতি অত্যধিক প্রবণতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা নির্দেশ করে এবং রোগের প্রতি কম প্রবণতা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আধিক্য নির্দেশ করে।
রোগ প্রতিরোধ অথবা আরোগ্য করতে গেলে, আমাদের জীবাণু ও প্রতিটি মানুষের প্রবণতার উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কীয় ব্যবস্থা হিসাবে ধরা যায় জল সরবরাহ, বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা সুৰ্য্যকিরণ, নর্দমার ময়লা জল-নিস্কাশন ব্যবস্থা, মশক নিবারণ, ইত্যাদি। রোগীসৃষ্টিকারী জীবাণুদের ব্যবস্থা করা এবং সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা, প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য, মানসিক শান্তি এবং সুনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন প্রবণতা এবং সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রোগের হাত থেকে শীঘ্র মুক্তি পাওয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে। হোমিওপ্যাথি ধাতুগত চিকিৎসা দ্বারা এই সমস্ত বংশগত ও অর্জিত অসুস্থতাকে সংশোধিত করতে পারে এবং সেই সঙ্গে প্রবণতা কমে যায় এবং রোগও প্রতিরোধ বা নিরাময় হয়।
হোমিওপ্যাথি মানুষের স্বাতন্ত্রীকরণের উপর বিশ্বাসী। এই পৃথিবীতে কখনই দু’টি মানুষ এক রকম নয়। সুতরাং, মানুষে মানুষে তার শারীরিক গঠন, মানসিক উন্নতি, বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত ক্ষমতায়, বাহ্যিক উত্তেজক জিনিষের প্রতিক্রিয়ায়, পছন্দ, অপছন্দ, ঘুম, স্বপ্ন ইত্যাদি বিষয়ে ধাতুগত লক্ষণের পার্থক্য দেখা যায়। একজন মানুষ যাকে দৃশ্যতঃ সুস্থ বলে মনে হয়, সে কিন্তু উপরোক্ত কয়েকটি ক্ষেত্রে অন্যান্য মানুষের থেকে কিছু পৃথক লক্ষণ দেখাতে পারে। বিভিন্ন ধাতুগত লক্ষণ সমন্বিত প্রভার-এর উপর হোমিওপ্যাথিক ঔষধ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং সেইজন্যই তাদের ধাতুগত লক্ষণ পরিবর্তন করতে পারা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়। যে কোন প্রকার দৈহিক গঠনের মানুষের মধ্যে কোন অসাধারণ দৈহিক অথবা মানসিক লক্ষণ প্রকাশ পেলে, ঠিকমত বিচার করে এবং সময়মত ঔষধ দিয়ে সহজেই ভাল করা যায়। একমাত্র হোমিওপ্যাথিতে বেধহয় এই ধাতুগত চিকিৎসা সম্ভব। কারণ, আমার যতদুর সম্ভব জানা আছে, অন্যান্য শাখার চিকিৎসাবিদ্যায়, কোন লোকের মধ্যে কোন রকম ধাতুগত লক্ষণের অসাধারণ ত্বকে তারা রোগ বলে মনে করেন না, যদি না তার মধ্যে কোন গঠনগত পরিবর্তন সাধিত হয় অথবা নোসসালজিক্যাল কোন রােগের নাম দেওয়া যায়। একমাত্র মানসিক রোগ অথবা যাদের স্নায়ুগ্রন্থ ব্যক্তি বলা হয় তাঁদের ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম দেখা যায়। এ ক্ষেত্রেও তুলনামূলক পার্থক্য দেখা যায়। রোমিওপ্যাথিতে সমস্ত দৈহিক অথবা মানসিক পরিবর্তনকে রোগ বলে চিহ্নিত করা হয়। সমগ্র লক্ষণ সমষ্টির উপর ঔষধ নির্বাচন করা হয় এবং তাদের অপসারণকে আরোগ্য বলা হয়। কারণ কোন রোগ | ভেতরে লুকায়িত অবস্থায় থাকতে পারে না। এটা অবশ্যই লক্ষণ অথবা আমাদের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ পাবে অথবা যান্ত্রিক বা পরীক্ষাগারে পরীক্ষিত তথ্য দ্বারা জানা যাবে। সেই জন্য ছেলেবেলায় ধাতুগত সামান্য পার্থক্যকে, ভবিষ্যতের সাংঘাতিক আরোগ্যসম্ভাবনাহীন রোগের ছায়া হিসাবে চিন্তা করা হয়। অর্থাৎ যে সমস্ত রোগের লক্ষণ ছেলেবেলায় দেখা যায় সেগুলিকে ভবিষ্যতের অনেক আরোগ্যসম্ভাবনাহীন রোগ লক্ষণের সুচনা হিসাবে হোমিওপ্যাথিতে চিন্তা করা হয়। সুতরাং যদি ধাতুগত ঔষধ দ্বারা ছেলেবেলায় এই সমস্ত লক্ষণের পরিবর্তন সাধন করা যায় তাহ'লে ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর রোগবস্থা সৃষ্টি হওয়ার বহু আগেই এগুলিকে দমন করা যায়। আমরা, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকেরা প্রতিদিন সজ্ঞানে অথবা অজ্ঞানে এটা করে থাকি। ধরা যাক, একজন শিশু টনসিল প্রদাহের জন্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাধীন হল। হোমিওপ্যাথিতে আমাদের রোগীর জন্ম থেকে বর্তমান অসুস্থতা পর্যন্ত বিস্তারিত ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। সেই সঙ্গে তার বংশগত ইতিহাসও নিতে হবে। শিশুর পীড়ার মূল কারণ সম্বন্ধে সযত্ন সিদ্ধান্ত বা এনামনেসিস (anamnesis)-এ উপনীত হতে হবে। এই মূল কারণ (মায়াজম-জনিত অসুস্থতা) হয় তার মায়ের অথবা বাবার দিক থেকে সুপ্ত অবস্থায় এসেছে বা আছে। প্রকৃতপক্ষে ঠিকমত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার দ্বারা শিশুর যে শুধুমাত্র টনসিল জনিত প্রদাহই আরোগ্য হবে তা নয়, সেই সঙ্গে তার ধাতুগত অস্বাভাবিক কোন গোলযোগ থাকলেও তাও আরোগ্য হবে। এইভাবে সেই শিশুর ভবিষ্যতের কোন আরোগ্য সম্ভাবনাহীন রোগের হাত থেকেও মুক্তি পাবে।
সোরিক, সিফিলিটিক ও সাইকোটিক:
ক্যান্সার রোগকে একটি মিশ্র মায়াজম জনিত হোমিওপ্যাথি প্রতিষেধক ও রোগ বলে মনে করা হয়। এর পেছনে সোরিক, সিফিলিটিক ও সাইকোটিক এই তিনটি মায়াজমই আছে। ক্যান্সার রোগগ্রস্থ পিতামাতার সন্তান সাধারণতঃ ক্যান্সার- জনিত অসুস্থতা বহন করে অথবা অধিকার করে। যদি আমরা শিশুটিকে ধাতুগত মায়াজম বিষন্ন ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করি তাহলে আমরা তার অস্বাভাবিক প্রবণতা সংশোধিত করতে পারি এবং সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহকারি রোগের হাত থেকে তাকে বাঁচাতে পারি। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ছাড়া এটা সম্ভবপর নয়। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের মত মারাত্মক রোগকে আরোগ্য এবং দমনের চেষ্টা চলছে। যেহেতু নিশ্চিত কারণ বোঝা যায় নি সেই হেতু নিরলস ও ব্যয়বহুল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোন তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য লাভ করা যায় নি। এই রোগকে সমাজ থেকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে, হোমিওপ্যাথির একটি বিশেষ ভুমিকা আছে বলে মনে হয়। ধাতুগত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ অনেক ক্যান্সার রোগীকে এমনকি শেষ অবস্থায়ও আরোগ্য করেছে।
হোমিওপ্যাথির বিশ্বাস:
হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে এলোমেলো অ্যান্টিবায়টিকস ঔষধের ব্যবহার, চর্মরোগের উপর প্রলেপ দেওয়া, অযথা অস্ত্র-চিকিৎসা প্রভৃতি চিররোগ চাপা পড়ার অন্যতম কারণ। সেই সঙ্গে পুনঃপুনঃ টিকা নেওয়াও অনেক দূরারোগ্য রোগের কারণ। হোমিওপ্যাথিক ধাতুগত চিকিৎসা এই সমস্ত অবস্থা সাফল্যের সঙ্গে আরোগ্য করতে পারে, অবশ্য অবস্থা যদি খুব অবনতির দিকে না গিয়ে থাকে। হোমিওপ্যাথি আরও বিশ্বাস করে যে, চির-রোগ আরোগ্যের ক্ষেত্রে, এই চিকিৎসা পদ্ধতিই (সদৃশ বিধান মতে চিকিৎসা, যেটা প্রকৃতির রোগআরোগ্য সম্বন্ধীয় নিয়মের উপর নির্ভরশীল) একমাত্র পথ। এই নিয়মের বিপরীত অন্য চিকিৎসা পদ্ধতি একমাত্র উপশমদায়ক, এবং এই উপশম দেওয়াই বহু আরোগ্য সম্ভাবনাহীন রোগের মূল কারণ। এসব ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথি কৃতকার্যতার সহিত উপশমের কুফলগুলিকে আয়ত্বের মধ্যে আনতে পারে এবং সেইসঙ্গে আরোগ্যসম্ভাবনাহীন অবস্থার সুচনাকেও বাধা দিতে পারে।
এই সমস্ত উদ্দেশ্য সাধন করতে হ'লে প্রচুর অর্থ এবং পরিচালন ব্যবস্থার দরকার এবং সেটা একমাত্র সরকারের চেষ্টাতেই সম্ভব। অপরদিকে, আমরা যাতে করে এই ধরণের দায়িত্বপূর্ণ কাজ প্রয়োজন মত সম্পন্ন করতে পারি তার জন্য দরকার হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রের সম্যক জ্ঞান।
আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রাম্য স্বাস্থ্য উন্নয়ণ প্রকল্পে হোমিওপ্যাথি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করতে পারে, যদি ভারত সরকার অথবা রাজ্য সরকার এই চিকিৎসা শাস্ত্রের দিকে আরও একটু নজর দেন এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ তাদের নিরলস প্রচেষ্টার দ্বারা এই ধরণের সুযোগের সদব্যবহার করতে পারেন।
সূত্র: হোমিও সাথী- ডা: এস. পি. দে
সতর্কীকরণ: হোমিও ঔষধ সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Nice post
ReplyDelete100%কাজ করে
ReplyDeleteGood information
ReplyDeleteThis is amazing information about homeopathic treatment.
ReplyDeleteAmazing post
ReplyDeleteOnk kisu jante parlam
ReplyDeletevery helpful article
ReplyDeleteI am interested
ReplyDeleteAfter Reading this post, we can understand the important of homeopathic medicine..thanks for the post
ReplyDeleteYour blog style is so realistic. It is very helpful to everyone 👍👍👍
ReplyDelete