হোমিপ্যাথি চিকিৎসায় রোগী লিপি তৈরির ধাপসমূহ কি কি?
হোমিপ্যাথি চিকিৎসায় রোগী লিপি তৈরির ধাপসমূহ কি কি?
রোগীলিপি হোমিও চিকিৎসার প্রান। রোগীলিপি ছাড়া হোমিপ্যাথিতে সফলতা খুব বেশি পাওয়া যায় না। তাই যারা নতুন বা নব্য ডাক্তার আছেন তাদের জন্য রোগীলিপির সাধারণ নিয়ম গুলো আলোচনা করলাম যদিও এটা আরো বৃহৎ হতে পারত কিন্তু নতুন ডাক্তারদের প্রথমে এতবেশি চাপ না দিয়ে একটু বেসিক জ্ঞান পেলে সামনের দিনে হয়ত তারা আরো নতুন নতুন থিউরী নিয়ে আগাতে পারবে।
রোগী লিপি তৈরি করার ধাপ সমূহসমূহ:
নাম - রোগীর নাম লিখবেন।
বয়স - বয়স কত সেটা লিখবেন
পেশা - রোগী কোন্ পেশায় নিয়োজিত সেটা লিখবেন।
তারিখ - কোন তারিখে রোগী দেখছেন। এর পরে পর্যায়ক্রমে-
১) রোগের বিবরণঃ রোগী কোন্ কোন্ রোগে ভুগছেন এবং রোগের ধরন সম্পর্কে লিখে নিবেন।
২) রোগের অবস্থা: বেশী না কম বা খারাপ।
৩) হ্রাস –বৃদ্ধি: রোগের হ্রাস বৃদ্ধি কখন হচ্ছে সেটা লিখবেন।
৪) রোগ হওয়ার আনুমানিক কারণ (Cousation of disease): রোগের কারন গুলো লিখতে পারেন যে- কোন্ কারনে রোগটা হয়েছে।
যেমন ধরুনঃ ব্যাথা পাওয়া, ভয় পাওয়া, মানসিক দুচিন্তা, পঁচা-বাসি খাবার খাওয়া ইত্যাদি।
৫) অতীত ইতিহাস (Past History): অতীতে যে-সব রোগ হয়েছিল বা অতীত রোগের ইতিহাস থাকলে সেটা লিখবেন।
যেমন- ধরুন পক্স, টায়ফায়েড, নিউমোনিয়া, কুকুরের কামড় ইত্যাদি।
৬) তাপমাত্রা সম্পর্কিত অনুভূতি: (hot and cold radiation) রোগীর কাতরতা- রোগী শীত কাতর নাকি গরম কারত? নাকি সে উভয় কাতর সেটা লিখবেন। ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটা অনেক গুরূত্বপূর্ণ।
৭) খাদ্যের ইচ্ছা-অনিচ্ছা (Food desire): যে-সব খাবার/ পানীয় খুব বেশী পছন্দ বা অপছন্দ সেটা লিখবেন। মনে করুন রোগি মিষ্টি, টক, লবন প্রিয় সেটা লিখবেন আবার রোগীর অপ্রিয় হল ঝাল, মাছ, তিতা সেটাও লিখবেন।
৮) ঘুম (Sleeping): রোগীর ঘুম সম্পর্তিক তথ্য প্রকাশ করবেন এবং এর অবস্থা কেমন সেটা লিখবেন।
৯) পায়খানা (Stool): রোগীর পায়খানার ধরন সম্পর্কে লিখবেন। তার আমাশয় থাকলে লিখবেন এবং পায়খানার রংও উল্লেখ করবেন।
১০) প্রসাব(Urine) রোগীর প্রস্রাবের অবস্থা শুনবেন, প্রসাব ক্লিয়ার কিনা, প্রসাবে জ্বালাপোড়া আছে কিনা যদি থাকে তবে প্রসাবের আগে না পরে? প্রসাব বাঁধা বাঁধা কিনা, প্রসাবের রং কেমন? সব গুলো লিপিবন্ধ করবেন।
১১) ঘাম (Sweat) রোগীর ঘাম কেমন? বেশি না কম? ঘামে গন্ধ আছে কিনা? ঘাম শরীরের কোন অংশে বেশি হয়?
১২) টিকা (Vaccine): রোগীর কোন প্রকার টিকা বা ইনজেকশন নেওয়া আছে কিনা সেটা উল্লেখ করবেন।
১৩) রোগীর পার্শ্ব সম্পর্কিত তথ্য (Side related report): রোগীর রোগ কোন্ পাশে বেশি হয় আবার স্থানান্তর হয় কিনা?
যেমন- ধরুন রোগ ডান থেকে বাম দিকে আবার বাম থেকে ডান দিকে যায় কিনা? কিংবা কোনাকুনি যায় কিনা? সেটা লিখবেন।
১৪) পিপাসা(Thristy): রোগীর পিপাসা কেমন সেটা শুনবেন? কম না বেশি এবং পানি কেমন খায়? বেশি বেশি নাকি কম? সেটা লিখবেন।
১৫) মানসিক আচার-আচারন (Mind and behaveior): রোগীর মনের ব্যাপারটা বড়ই জরুরী কারন রোগ মন থেকেই উৎপত্তি তাই তার মন, তার আচার-আচারন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন। সে চিন্তাশীল নাকি চিন্তাহীন? তার আচার কি কর্কট নাকি নরম, সে কি সহজে কাঁদে নাকি নিষ্ঠুর? এসব ধরনের তথ্য নিবেন।
১৬) গোসল (Bathing): রোগীর গোসল সম্পর্কে তথ্যগুলো লিখবেন।
যেমন-গোসল করতে ভালবাসে কিনা? কিংবা গোসলে অনিচ্ছা আছে কিনা? আবার গোসলের পর রোগ বাড়ে কিনা? এমন সব কিছু লিখবেন।
১৭) স্বপ্ন (Dream): রোগীর স্বপ্ন সম্পর্কে লিখবেন। সে কি স্বপ্ন দেখে। সাপের নাকি, চোর ডাকাত? কোন কিছু খাওয়ার স্বপ্ন দেখে নাকি পানিতে সাঁতার কাটার স্বপ্ন দেখে? নাকি সে উড়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে সেগুলো লিপিবদ্ধ করবেন।
১৮) ভয় (Fear): রোগী ভয় কেমন পায়? কিসের ভয় পায়? ভুতের নাকি জীবজন্তুর সেটা লেখার চেষ্টা করবেন।
১৯) জিহ্বার অবস্থা(Tongue Conditions): জিহ্বা শুষ্ক নাকি ভেজা বা স্বাভাবিক থাকে। জিহ্বার রং দেখে বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
২০) মাসিক স্রাব (Menstruation): মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে মাসিক স্রাব সম্পর্কে সুন্দর ভাবে লিপিবন্ধ করবেন। তাদের মাসিকের রক্তের রং কেমন? ব্যাথা হয় কিনা? মাসিক বন্ধ আছে কিনা? মাসিক অনবরত চলতে থাকে কিনা? সব কিছু লিপিবন্ধ করবেন।
২১) অদ্ভুদ লক্ষন (Peculiar Symptoms): অদ্ভুদ লক্ষন-যেটার মুল্যায়ন হোমিওপ্যাথিতে অনেক বেশি। রোগীর কিছু কমন লক্ষন গুলো বিভিন্ন ঔষধের মধ্যে মিল পাবেন কিন্তু তার মধ্য থেকে পিকিউলার লক্ষন গুলো মুল্যায়ন বেশি হয়। তাই রোগী লিপি করার সময় ডাক্তারকে বিভিন্ন দিক মুল্যায়ন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
বিঃদ্রঃ রোগীলিপিটা মুলত নতুন ডাক্তারদের জন্য।
আরও দেখুন নিচের ভিডিওতে-
-----------------------------------
আরও পড়ুন-
হোমিপ্যাথি চিকিৎসায় রোগী লিপি বলতে কি বুঝায়?
-----------------------------------
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘ফেসবুক পেজে” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments