কান পাকা রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা || কানে পুঁজ
কান পাকা (কানে পুঁজ): কানে জল প্রবেশ করিয়া, ঠান্ডা লাগিয়া, প্রদাহ হইয়া, হাম, জ্বর বসন্তাদির পর কানে পুঁজ দেখা দেয়। কান পাকা পুরাতন হইলে বধিরতা আনায়ন করে। পুরাতন কান পাকা সহজে আরোগ্য হইতে চায় না। পুরাতন কান পাকা সহজে ভালো হইতে চায় না।
কান পাকা রোগের হোমিওপ্যাথিক ঔষধ:
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা একটি লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। ঔষধের লক্ষণের সাথে রোগীর লক্ষণ মিলিয়ে হোমিও ঔষধ প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিম্নে কান পাকা সমস্যার কয়েকটি হোমিও ঔষধ, লক্ষণ ও প্রয়োগ মাত্রা উল্লেখ করা হলো-
ক্যান্সিকম (Capsicum): পুঁজ নির্গত হয়। মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হইলে এই ঔষধ উপকারে আসে।
সেবন বিধি: শক্তি 200 বা 1m সপ্তাহ অন্তর সকাল বিকাল দুই মাত্রা। সম্পূর্ণ আরোগ্য না হইলে, 10m, 50m, Cm ১৫ দিন বা মাসান্তে এক মাত্রা ব্যবহার্য।
বোরাক্স(Borax): নিম্ন গতিতে আতংক। অর্থাৎ নিচের দিকে নামিতে বা নামাইতে ভয় পাওয়া ইহার বিশেষ লক্ষণ। এই ধাতুর রোগীদের কান থেকে ঘন সাদা বর্ণের পুঁজ নির্গত হইলে বোরাক্স অব্যর্থ।
সেবন বিধি: শক্তি 3x, 6x প্রত্যহ তিন মাত্রা। পুরাতন রোগীর জন্য 200 বা 1m সপ্তাহ অন্তর সকাল বিকাল দুই মাত্রা। বহু পুরাতন কান পাকা 10m, 50m বা Cm শক্তি ব্যবহারে অনেক উপকার পাওয়া গিয়াছে। উপর উল্লেখিত বিশেষ লক্ষণে শিশুদের কান পাকা 3x দিনে তিন বার সেবন করিতে দেওয়ায় বহু রোগী আরোগ্য হইয়াছে।
টেলিউরিয়ম (Tellurium): নতুন বা পুরাতন কান পাকায় ইহা একটি প্রসংশনীয় ঔষধ। কানের পুঁজ মাংস ধোয়া জলের ন্যায় পাতলা, ভিষণ দুর্গন্ধ, লোক কাছে বসিতে চায় না। দুর্গন্ধযুক্ত কান পাকায় এই ঔষধ ব্যবহারে বহু রোগী উপকার পাইয়াছে।
সেবন বিধি: শক্তি 6 বা 30 প্রত্যহ দুই মাত্রা। পুরাতন রোগীর জন্য 200, Im বা আরো উচ্চ শক্তি ব্যবহার্য।
সোরিনাম (Psorinum): নতুন পুরাতর উভয় প্রকার কান পাকায় উৎকৃষ্ট ঔষধ । হলুদ বর্ণের পূজে অত্যন্ত দুর্গন্ধ। মল-মূত্র, ঘর্ম, মুখে দুর্গন্ধ, স্ফুর্তিহীন, শীতে কাতর, অপরিষ্কার, নোংড়া রোগীদের ইহা অব্যর্থ।
সেবন বিধি: শক্তি 200 বা 1m সকাল বিকাল দুই মাত্রা। পুরাতন রোগীর জন্য 10m, 50m, Cm শক্তি ব্যবহার্য।
মার্কুরিয়াস সল (Merc Sol): কানে পুঁজ, রক্ত মিশ্রিত, পূঁজে ভীষণ দুর্গন্ধ। হলুদ বা সবুজ বর্ণের পুঁজের সঙ্গে রক্ত। কানে যন্ত্রণা রাতে বৃদ্ধি, বিছানার গরমে বৃদ্ধি ইত্যাদি লক্ষণে ইহা উপকারী।
সেবন বিধি: শক্তি 200 বা 1m পুরাতনে আরো উচ্চ শক্তি সকাল বিকাল দুই মাত্রা ব্যবহার্য।
টিউবারকিউলিনাম (Tuberculinum): প্রায়ই সর্দি ঠান্ডা লাগিয়াই থাকে। নাকে সর্দি, কানে পুঁজ, পুঁজে মাংস পঁচার মত দুর্গন্ধ, পুরাতন কান পাকা কিছুতেই আরোগ্য না হইলে ইহা প্রযোজ্য।
সেবন বিধি: শক্তি 200 বা 1m সকাল বিকাল দুই মাত্র। পুরাতন রোগীর জন্য আরো উচ্চ শক্তি।
খুজা (Thuja): পুরাতন কান পাকা, কানের পুঁজ পঁচা মাংসের মত দুর্গন্ধ, কানের ভিতর গেঁজ হইলে খুজা তাহা আরোগ্য করিতে পারে।
সেবন বিধি: শক্তি 200 হইতে উচ্চ শক্তি। নয় বছরের বালিকার দুর্গন্ধ যুক্ত কান পাকায় কানের ভিতর গেঁজ হইয়াছিল। তাহাকে থুজা Cm সকাল বিকাল দুই মাত্রা সেবন করিতে দেওয়া হয়। এক মাস পরে সংবাদ পাওয়া গেল কান পাকা ও গেঁজ উভয়ই দূরীভূত হইয়াছে।
আর্নিকা মন্ট(): কান পাকা, কানের ভিতর কাঠি বা পালকাদি দিয়ে খোঁচানো কারণ, অন্যান্য ঔষধে উপকার না হইলে আর্নিকায় উপকার হয়। ইহার ব্যবহারে উপকার পাওয়া গিয়াছে।
সেবন বিধি: শক্তি 1m 10m বা আরো উচ্চ শক্তি। সপ্তাহ বা পনের দিন অন্তর সকাল বিকাল দুই মাত্রা। পিউর গ্লিসারিন দুই ফোঁটা করিয়া দিনে তিন বার কানে বাহ্যিক প্রয়োগ করিলে আরো শীঘ্র উপকার হয়।
ভায়োলা অডোরেটা(Viola Odorate): কানে ভীষণ বেদনার সহিত পুঁজ নির্গত হইতে থাকিলে এই ঔষধ সেবনে উপকার হয়। পুঁজ স্রাবের সহিত কান বেদনা এই ঔষধ সেবন করিতে দিয়া অনেক রোগীর উপকার পাওয়া গিয়াছে।
সেবন বিধি: শক্তি 6 বা 30 দুই তিন ঘন্টা অন্তর ব্যবহার্য।
পথ্য ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা
কানের ভিতর পালক বা কাঠি দিয়া খোঁচানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ডুব দিয়া স্নান করিলে কান পাকা আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কম। সর্ব প্রকার কান পাকায় ফেরাম ফস 3x (বায়োকেমিক ঔষধ) চূর্ণ কানের ভিতর বাহ্যিক প্রয়োগে কান পাকা আরোগ্য হয়। মুলেন অয়েল দুই তিন ফোঁটা দিনে তিন বার কানের ভিতর প্রয়োগ করিলে কান পাকা আরোগ্য হয়।
সূত্র: অব্যর্থ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা, ডা: এম. এ হোসেন
সতর্কীকরণ: হোমিও ঔষধ সেবনের পূর্বে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
পোস্টের নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ‘‘Facebook Page” লাইক দিয়ে রাখুন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে নিচের ফেসবুক, টুইটার বা গুগল প্লাসে
শেয়ার করে আপনার টাইমলাইনে রেখে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
No comments